ইসলামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পবিত্রতা। পবিত্রতা মানে জীবনব্যাপী পবিত্রতা। যথা বিশ্বাসের পবিত্রতা, কর্মের পবিত্রতা, শারীরিক পবিত্রতা, মানসিক পবিত্রতা, আর্থিক পবিত্রতা, বাহ্যিক পবিত্রতা, অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা; ভাষা তথা বাক্যের ও শব্দের পবিত্রতা, রুচির পবিত্রতা, দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গির পবিত্রতা; পরিবেশের ও প্রতিবেশের পবিত্রতা; শ্রবণে পবিত্রতা, দর্শনে পবিত্রতা ও চিন্তায় পবিত্রতা পবিত্র জীবন যাপনের পূর্বশর্ত ও সহায়ক বটে। সর্বোপরি জ্ঞানের পবিত্রতা সর্বশীর্ষে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, উহার অনুসরণ করো না; কর্ণ, চক্ষু, হৃদয়, উহাদের প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সূরা-১৭ আল ইসরা/বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৬)।
হাদিস শরিফে রয়েছে, আবু মালিক আশআরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত তহুরু শাতরুল ইমান।’ অর্থাৎ, পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘আত তহুরু নিসফুল ইমান।’ অর্থাৎ, পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক। (মুসলিম শরিফ, মিশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা: ৩৮, আলফিয়াতুল হাদিস)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের উঠান ও আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখো।’ মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে ভালোবাসেন।’
পবিত্র, নিখাদ ও বিশুদ্ধ জীবন যাপনের জন্য ইসলাম। তাই ইসলামি শরিয়ামতে, আত্মিক পবিত্রতার পাশাপাশি শারীরিক পবিত্রতাও জরুরি। ইসলাম সার্বক্ষণিক পবিত্রতার সঙ্গে ইবাদতে পবিত্রতার শর্তারোপ করেছে। অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে পবিত্রতাকে ফরজ ও পূর্বশর্ত করা হয়েছে। যেমন নামাজ পড়া, কোরআন স্পর্শ করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। নামাজের ১৩টি অপরিহার্য ফরজের
প্রথম পর্বের সাতটি শর্তের তিনটিই হলো পবিত্রতাবিষয়ক; যথা শরীর পাক, কাপড় পাক, নামাজের জায়গা পাক। এবং নামাজ ভঙ্গের ১৯টি কারণের একটি হলো ‘নাপাক জায়গায় সিজদা করা’।
শারীরিক বা বাহ্যিক পবিত্রতার তিনটি বিধিবদ্ধ পন্থা নির্ধারিত রয়েছে। যথা অজু, গোসল ও তায়াম্মুম। অজু ও গোসল পবিত্র পানি দিয়ে সম্পাদিত করা হয় এবং তায়াম্মুম বিশেষ শর্তে পবিত্র মাটি দিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বাহ্যিক ও শারীরিক পবিত্রতার প্রধান পদ্ধতি অজুর চারটি ফরজ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও…অথবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে।’ (সূরা-৫ আল মায়িদাহ, আয়াত: ৬)।
বাহ্যিক অপবিত্রতা ও নাপাক থেকে পবিত্র হতে যেমন আমদের অজু, গোসল ও তায়াম্মুম করতে হয়; অনুরূপ অভ্যন্তরীণ নাপাক থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য তওবা করা জরুরি। অভ্যন্তরীণ নাপাক হলো: লোভ-লালসা, রিয়া, অহংকার, মিথ্যা, গিবত, ক্রোধ, হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, শত্রুতা ইত্যাদি। হাদিস শরিফে আছে, ‘যে ব্যক্তি সুন্নত তরিকায় ভালোভাবে অজু করবে এবং অজুর শেষে ওপরের দিকে তাকিয়ে কালিমা শাহাদত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটা দরজাই সব সময় খোলা থাকবে; সে যখন খুশি তাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি)। অন্য হাদিসে আছে, ‘নামাজ বেহেশতের চাবি; অজু (পবিত্রতা) নামাজের চাবি। (মিশকাত)। অজুর পানির সঙ্গে গুনাহসমূহ ধুয়ে যায় এবং সেই ব্যক্তি পবিত্র হয়ে যায়। পবিত্রতার উদ্দেশ্যে যে গোসল করে, তার পাপরাশি ঝরে যায় এবং ঝরে পড়া প্রতিটি পানির ফোঁটা ও কণা একেকটি নেকি রূপে গণ্য হয়।’ (আল হাদিস)।
পবিত্রতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বারি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে তোমাদের পবিত্র করার জন্য।’ (সূরা-৮ আনফাল, আয়াত: ১১)। ‘এবং আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।’ (সূরা-২৫ আল ফুরকান, আয়াত: ৪৮)।
মন ও স্থানের পবিত্রতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ, ‘আমার সহিত কোনো শরিক স্থির করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রেখো।’ (সূরা-২২ হজ, আয়াত: ২৬)।
পবিত্র পরিচ্ছদ গ্রহণ বা পোশাক পবিত্রকরণ ও আবিলতামুক্ত হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তাআলার আদেশ: ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্ক করুন; এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন, অপবিত্রতা পরিহার করে চলুন। (সূরা-৭৪ মুদ্দাছছির, আয়াত: ১-৪)।
ইবাদতের জন্য পবিত্রতা এবং ইবাদতকারীদের জন্য ইবাদতের স্থান আল্লাহর ঘর পবিত্র করার ও পবিত্র রাখার নির্দেশনা: ‘এবং ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-কে আমার গৃহ পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম; তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)।
আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন এবং পবিত্রগণকে ভালোবাসেন। আত্মিক পবিত্রতার প্রথম ধাপ হলো তওবা তথা পাপ বর্জন করে পুণ্যের পথে ফিরে আসা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীগণকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদিগকেও ভালোবাসেন।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)।
ইসলামের পরিভাষায়, গোসল হল সমস্ত দেহ ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। কথিপয় ধর্মীয় উপাসনা এবং আচার-আনুষ্ঠান পালনের পূর্বশর্ত হচ্ছে গোসল। সকল প্রাপ্তবয়স্ক মোসলমান নর-নারীর যৌনসঙ্গম , যৌনস্থলন (যেমন : বির্যপাত), রজস্রাবঃ সমাপ্তির পর, সন্তান প্রসবের পর এবং স্বাভাবিক কারণে মৃত্যুর পর গোসল করা ফরজ (বাধ্যতামূলক) হয়। তাছাড়া, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পূর্বে, ঈদের নামাজের পূর্বে, এহরামের পূর্বে, হজ্জের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়,অজ্ঞান হওয়ার পর সচেতন হলে অথবা আনুষ্ঠানিকভাবে কেঊ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব (উৎসাহিত করা হয়)। শিয়া মতে, তওবার নামাযের পূর্বে গোসল করতে হয়।
গোসলের পানি:
পবিত্র পানি দিয়ে গোসল করতে হয়। যেমনঃ-
- বৃষ্টির পানি
- কূয়ার পানি
- ঝর্ণার, সাগর, নদীর পানি
- বরফ গলা পানি
- বড় পুকুর বা টেঙ্কের পানি
যেই পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না তা হলঃ
- অপরিচ্ছন্ন বা অপবিত্র পানি
- ফল বা গাছ নিসৃতঃ পানি
- কোন কিছু মিশানোর কারণে যে পানির বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং গারত্ব পরিবর্তিত হয়েছে।
- অল্প পরিমাণ পানি: যাতে অপবিত্র জিনিস মিশে গেছে (যেমনঃ মূত্র, রক্ত, মল বা মদ)।
- অযু বা গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি।
- অপবিত্র (হারাম) প্রাণী, যেমনঃ শূকর, কুকুর ও আন্যান্য হিংস্র প্রানীর পানকৃত পানির আবশিষ্ট।
গোসলের পদ্ধতি:
গোসলের তিনটি ফরজ কাজ। এর যে কোন একটি বাদ গেলে গোসল হয় না। সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার সাথে ফরজ কাজ পুনরায় করে গোসল শুদ্ধ করে নিতে হয়। ফরজগুলো হলঃ
- মুখের ভিতর পর্যন্ত কুলি করা।
- পানি দিয়ে নাকের ভিতর পরিষ্কার করা।
- পানি দিয়ে সমস্ত শরীর এমনভাবে ধোয়া যাতে চুল পরিমাণ জায়গা শুকনো না থাকে (অন্যথায়, গোসল পরিপূর্ণ হবে না।)
গোসলের সুন্নত:
গোসলের কিছু সুন্নত ঐচ্ছিক কাজ) আছে। সহীহ্ হাদিস অনুসারে, হযরত মোহাম্মদ তা করতে উৎসাহিত করেছেন। যেমনঃ
- দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
- গোপন অঙ্গগুলো ধোয়া এবং দেহের আপরিষ্কার ও নাপাক আংশ ধোয়া।
- অযু করা।
- মাথার উপর তিনবার পানি ধালা যাতে সমস্ত দেহের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অযু হল ইসলামের বিধান অনুসারে দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। মুসলমানদের নামাজের পূর্বে অযু করে নেয়া বাধ্যতামূলক। কুরআনে আছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।” (সূরা বাকারা,আয়াত:২২২)।
কুরআন পড়তে ও স্পর্শ করতেও অযু করতে হয়। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। কুরআনে বর্ণিত আছে, “যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। (সূরা ওয়াক্কিয়াহ্, আয়াত:৭৯)।
এখানে পাক পবিত্র বলতে দৈহিক পবিত্রতা নয় বরং আত্মিক পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে। দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের পবিত্রতা অর্জনকে আরবিতে বলে তাহারাত্। অযু বা গোসলের মাধ্যমে তাহারাত্ আর্জন করা যায়। মুহাম্মদ বলেছেন, “পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ধর্মের অর্ধেক”। (সহীহ মোসলিম)
যে পানিতে ওযু করা যাবে:
- ঝর্ণা, সাগর ও নদীর পানি
বরফ গলা পানি - বড় পুকুর বা ট্যাঙ্কের পানি
- বৃষ্টির পানি
- কূয়ার পানি
- প্রবহমান পানি
যে পানি দিয়ে ওযু করা যাবে না:
- অপরিচ্ছন্ন বা অপরিষ্কার পানি
- গাছ বা ফল নিসৃতঃ পানি
- কোন কিছু মিশানোর কারণে যে পানির বর্ণ, গন্ধ, স্বাদএবং গারত্ব পরিবর্তিত হয়েছে
- অল্প পরিমাণ পানি: যাতে অপবিত্র জিনিস মিশে গেছে (যেমনঃ মূত্র, রক্ত, মল বা মদ)
- অযু বা গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি
- অপবিত্র (হারাম) প্রাণী, যেমনঃ শূকর, কুকুর ও আন্যান্য হিংস্র প্রানীর পানকৃত পানির আবশিষ্ট
ওযুর ফরয ৬টি:
১। মুখমণ্ডল ধৌত করা। মুখ ও নাক মুখমণ্ডলের অংশ।
২। দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
৩। মাথা মাসেহ করা।
৪। দুই পা টাকনুসহ ধৌত করা।
৫। ওযুর অঙ্গগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
৬। পরম্পরা রক্ষা করা (অর্থাৎ অঙ্গগুলো ধৌত করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের বিরতি না দেয়া)।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথায় মাসেহ কর এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]
ওজুর পদ্ধতি-
বিসমিল্লাহ সহকারে অযুর নিয়ত করুন।
(১) নিয়তঃ আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি।
(২) প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়াঃ ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে।
লক্ষণীয়ঃ হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
(৩) মিসওয়াক করাঃ কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে।
(৪) কুলি করাঃ ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নত। তিনবার কুলিকরা সুন্নত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।
(৫) নাকে পানি দেওয়াঃ ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিস্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিস্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নারা—চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।
(৬) মুখমন্ডল ধোয়াঃ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া, তিনবার ফরয, তিন বার ধোয়া সুন্নাত।
(৭) দাড়ি ও গোঁফ : দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরয। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরয নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।
(৮) উভয় হাত কনুই উভয় হাত কনুই সহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরয, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে। বিঃদ্রঃ কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, এ অবস্থায় খিলাল করা ওয়াজিব।
(৯) মাথা মাসেহ করাঃ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরয, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত।
(১০) মাথা মাসেহের নিয়মঃ বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যে ভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
(১১) কান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ট আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্য কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত।
(১২) গর্দান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।
(১৩) গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।
(১৪) অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব।
ওজু শেষ হবার পর নিচের দু’আ পড়তে হবে-
”আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু-লা-শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু-ওয়া রাসূলুহু।”
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।
ইসলামের বিধান অনুসারে, তায়াম্মুম (আরবি: تيمم) হল অযু বা গোসলের বিকল্প স্বরূপ বালি, মাটি বা ধূলা দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। পবিত্র পানি অলভ্য হলে, কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করে তায়াম্মুম করতে হয়।
তায়াম্মুম করার পদ্ধতি:
তায়াম্মুমের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করতে হয়। তায়াম্মুম করার জন্য হাতে মাটি লাগিয়ে নিতে হয়। আঙ্গুল ছড়িয়ে দুই হাত এমনভাবে পাক-পবিত্র মাটির ওপর থাপড়াতে হয় যাতে স্বাভাবিকভাবেই হাতের তালুতে কিছু ধূলা লেগে যায়। অতঃপর উভয় হাত দিযে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করতে হয়। এরপর আবার মাটিতে হাত থাপড়িয়ে ধূলা লাগিয়ে নিয়ে প্রথমে বাম তালু দিয়ে ডান হাত কনুই পর্যন্ত এবং পরে ডান তালু দিয়ে বাম হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করতে হয়।
মৃত ব্যক্তির তায়াম্মুম:
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পূর্বে গোসল দিতে হয়। তবে প্রয়োজনীয় পানি না-পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করাতে হয়।
শর্তাবলী:
অযু বা গোসলের পরির্বতে নিন্মোক্ত অবস্থায় তায়াম্মুম করতে হয়।
- আশেপাশে ১.৭ কিলোমিটারের মধ্যে পানি পাওয়া না যায়।
- পানি পেতে যদি শত্রুর, সাপ কিংবা বিপদজনক পশুর আক্রমণের ভয় থাকে।
- এত আল্প পানি থাকে যে তা গোসল বা অযুতে ব্যবহার করলে খাওয়ার পানির সংকট হবে।
- কেহ তার সুচিন্তিত আভিজ্ঞতা অথবা বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে জানতে পারে যে, পানি ব্যবহার তার স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
- পানি কিনে বব্যহার করার মত যথেষ্ট অর্থ না থাকে।
- পানির দাম খুব বেশি হয়।
তায়াম্মুমের ফরয:
তায়াম্মুমের ফরয ৩টি।
১) পবিত্রতার নিয়ত করা
২) সমস্ত মুখ একবার মাসাহ করা
৩) দুই হাতের কনুইসহ মাসাহ করা
কুরআনে তায়াম্মুমের আদেশ:
আল্লাহ বলেন,
فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বাংলায় অনুবাদ- অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।
তায়াম্মুম প্রবর্তনের ইতিহাস:
মুহাম্মদ(দ:) এর স্ত্রী আয়েশা (রা:) সংশ্লিষ্ট একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পানির অভাবে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করার আদেশ জারী হয়।
ফরয গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে দেহপবিত্রকরণের বিধান রয়েছে।
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণসমূহ:
যেসমস্ত কারণে অযু ভঙ্গ হয় সেসমস্ত কারণে তায়াম্মুম ও ভঙ্গ হয়। এছাড়াও যদি পানি পাওয়া যায় অথবা যদি পানি ব্যবহারে সক্ষম হয় ।